পবিত্র ঈদে গাদিরে খুম
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি আলা রাসূলিহিল কারিম,আম্মাবাদ।আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রিয় হাবীব হযরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজ্ব উপলক্ষে গ্বাদীরে খোম নামক স্থানে যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন,সে ভাষণের পর থেকে যারা প্রকৃত মুমিন,যারা আশেকে রাসূল (সা.),আশেকে আহলে বাইত (আ.)তারা প্রতিবছর অত্যন্ত গুরুত্ব ও মহব্বতের সঙ্গে ঈদে গ্বাদীর পালন করে আসছেন।
এরঁ কারণ হল- নবী করীম (সা.)শেষবারের মত যখন হজ্ব করে আসেন এবং গ্বাদীরে খোমের নিকটবর্তী রাস্তায় আসেন তখন আল্লাহর তরফ থেকে তাঁর হাবীবের ওপরে ওহী নাজিল হল- যা সূরা মায়েদার ৬৭ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।এ আয়াত নাজিল হওয়ার পরে নবী করীম (সা.)তাঁর প্রিয় সাহাবী হযরত বেলাল (রা.)কে বললেনঃ-চারদিকে যারা চলে গেছে তাদেরকে ফিরিয়ে আন এবং পেছন দিক থেকে যারা আসছে তাদেরকে এখানে অবস্থান করতে বল কারণ, এখানে আমি ভাষণ দেব।আমার সঙ্গে যে এক লক্ষ বিশ হাজার হাজী হজ করেছে তাদের উদ্দেশে আমি কিছু বলব।
রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী হাজীগণ গ্বাদীরে খোম নামক স্থানে সমবেত হলেন।সেখানে মঞ্চ তৈরি করা হল। সেখানে রাসূলেখোদা দীর্ঘ তিন ঘণ্টা বিশদভাবে তাঁর উম্মতের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন।
![]() |
| © Azader Media |
এই ভাষণ এত গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে,আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা মায়েদার ৬৭ নম্বর আয়াতে তা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন:"হে রাসূল,পৌঁছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন,তবে আপনি তাঁর পয়গাম কিছুই পৌঁছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।"
নবী করীম (সা.) বিদায় ভাষণের শেষভাগে তাঁর উম্মতদের উদ্দেশ্য বললেন, আমি তোমাদের নিকট দু'টি ভারী বস্তু রেখে যাচ্ছি, একটি হল আল্লাহর কুরআন আর অপরটি হল আমার আহলে বাইত। আহলে বাইত বলতে নবী করীম (সা.)এর আওলাদ অর্থাৎ হযরত মাওলা আলী (আ.)হযরত ফাতেমা (সা.আ.),হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) ও ইমাম হাসান (আ.) এই চারজনকে বোঝায়।নবীজী বলেছেন, "আল্লাহর কুরআন ও আমার আহলে বাইত একে অপর থেকে কখনো বিচ্ছিন্ন হবে না,যারা এই দু'টি জিনিসকে আঁকড়ে ধরে রাখতে পারবে তারা কেয়ামতের দিন হাউজে কাউসারে আমার নিকট পৌঁছে যাবে।"
এ কারণেই গ্বাদীরের যে ঐতিহাসিক ভাষণ তার শেষভাগে তিনি বললেন,আমি কি তোমাদের মাওলা? উপস্থিত সকলেই বললেন,হ্যাঁ আপনিই আমাদের মাওলা অর্থাৎ আপনিই আমাদের অভিভাবক।এ সময় তিনি হযরত আলীর হাত নিজের হাতে ধরে উঁচু করে সবার উদ্দেশ্য বললেন,আমি যার মাওলা,আলী তার মাওলা অর্থাৎ আমি যাদের অভিভাবক,আলী তাদের অভিভাবক।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, নবীজী গ্বাদীরে খোমে পরবর্তী তিন দিন হাজিদের নিয়ে ছিলেন এবং সকলেই রাসূল (সা.)এর নির্দেশে হযরত আলী (আ.)এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন।
১৮ই জিলহজ্ব একটি মহিমান্বিত দিন।এ দিনে নতুন পোষাক পরিধান করা,সুগন্ধি ব্যাবহার করা,আনন্দ করা,ত্রুটি সমূহকে ক্ষমা করা,আত্মীয় স্বজনদের সাথে সাক্ষাত করা,খাদ্য দান করা,করমর্দন করা,উপহার দেয়া,আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করা,বেশী বেশী দরুদ পাঠ করা,কোরআন তেলাওয়াত করা,মীলাদ কিয়াম ও নফল ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকা।
