ইমাম হুসাইন আঃ এরঁ কারামত খন্ড- ৩
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
হোসাইন বিদ্বেষীর তৃষ্ণার্ত অবস্থায় মৃত্যু
মুজনী বংশোদ্ভূত ইয়াজিদ বাহিনীর এক পাষাণ ব্যক্তি ইমামে আলী মকাম ইমাম হোসাইন (আঃ)ُ এর সামনে এসে এভাবে বকাবকি করতে লাগল: “দেখ! ফোরাত নদীর স্বচ্ছ পানি কিভাবে প্রবাহিত হচ্ছে। খোদার কসম! তোমাকে এটির এক ফোঁটা পানিও পান করতে দেবনা, তুমি এভাবে তৃষ্ণার্ত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে।” ইমাম হোসাইন (আঃ)ُ আল্লাহ্ তাআলার দরবারে দোয়া করলেন: “اَللّٰهُمَّ اَمِتْهُ عَطْشَانًا"অর্থাৎ- "হে আল্লাহ্!তুমি তাকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় মৃত্যু দাও।”
ইমামে আলী মকাম এর (আঃ) এর দোয়া করার সাথে সাথেই আল্লাহ্ তাআলার দরবারে কবুল হয়ে গেল। সে নরাধম মুজনীর ঘোড়া লাগাম ছিঁড়ে দৌড় দিল। ঘোড়াকে ধরার জন্য সেও ঘোড়ার পিছনে ছুটল। দৌড়াতে দৌড়াতে সে পিপাসায় কাতর হয়ে পড়ল।
তীব্র পিপাসায় সে হায় পিপাসা! হায় পিপাসা! করে চিৎকার করতে লাগল।তার মুখের নিকট পানি নিয়ে পান করার জন্য বারবার চেষ্টা করার পরও সে এক ফোঁটা পানিও পান করতে পারল না। অবশেষে তীব্র পিপাসায় ছটফট করতে করতে সে মৃত্যুর মুখে পতিত হল।(সাওয়ানেহে কারবালা, ৯০ পৃষ্ঠা)
হাঁ মুঝ কো রাখহো ইয়াদ মে হায়দর কা পেসার হোঁ
আওর বাগে নবুয়ত কে শজর কা মে চমর হোঁ
মে দিদায়ে হিম্মত কে লিয়ে নূরে নজর হোঁ
পিয়াছা হো মগর ছাকীয়ে কাওছার কা পেসার হোঁ
কারামতগুলো সত্যতা প্রমাণ করার একটি মাধ্যম ছিল
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! ইমামে আলী মকাম ইমাম হোসাইন (আঃ)ُ একজন কত উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ছিলেন। জানা গেলো, তাঁর সাথে বেয়াদবী করা আল্লাহ্ তাআলা একেবারে পছন্দ করেন না, তাঁর সমালোচনাকারী ও বিরুদ্ধাচারীরা উভয় জাহানে ঘৃণিত ও লাঞ্চিত। হোসাইন বিদ্বেষীদের দুনিয়াতেও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সম্মুখীন হয়।
তাই এতে আমাদের জন্য অনেক শিক্ষা রয়েছে। সদরুল আফাযিল হযরত আল্লামা মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ নঈম উদ্দীন মুরাদাবাদী (রাঃ)ِ ইমাম হোসাইন (আঃ)ُ ُ এর বিরুদ্ধাচারী কতিপয় দুর্বৃত্তের তৎক্ষণাৎ শোচনীয় পরিণতির করুণ কাহিনী বর্ণনা করার পর লিখেছেন: আওলাদে রাসূল জগৎ বাসীকে এ কথাও দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে, তিনি আল্লাহর একজন মকবুল বান্দা এবং আল্লাহ্ তাআলার নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভের ব্যাপারে যেভাবে কুরআন হাদীসের অসংখ্য দলীল প্রমাণ রয়েছে, তাঁর অসংখ্য কারামত ও অলৌকিক ঘটনাবলীও আরেকটি সাক্ষ্য বহন করে। তাই তিনি তাঁর এ কৃতিত্ব ও মহত্ত্বের বাস্তব প্রমাণ দেখিয়ে বিরুদ্ধাচারীদের সমালোচনার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছিলেন।
তিনি সুস্পষ্ট ভাষায় তাদের জানিয়ে দিয়েছিলেন: “হে সমালোচনাকারীরা! যদি তোমাদের চোখ থাকে, তাহলে ভালভাবে দেখে নাও, যার দোয়া আল্লাহ্ তাআলার দরবারে মুহূর্তের মধ্যে কবুল হয়ে যায়, তাঁর বিরুদ্ধে লড়তে আসা অসীম ক্ষমতাধর আল্লাহর সাথে লড়তে আসার মত।
তাই এর করুণ পরিণতি সম্পর্কে চিন্তা করে এবং যুদ্ধ বিগ্রহ থেকে বিরত থাকো। কিন্তু সে নরপিশাচরা তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করল না। এ অস্থায়ী দুনিয়ার লোভ লালসার ভূত তাদের ঘাড়ে সাওয়ার হয়ে তাদেরকে অন্ধই বানিয়ে দিয়েছিল। (সাওয়ানেহে কারবালা, ৯০ পৃষ্ঠা)
নূরের স্তম্ভ ও সাদা সাদা পাখিঃ
ইমামে আলী মকাম ইমাম হোসাইন (আঃ)ُ এর শাহাদাতের পর তাঁর শির মোবারক থেকে অসংখ্য কারামত প্রকাশিত হয়েছিল। আহলে বাইতের কাফিলার অবশিষ্ট সদস্যরা ১১ই মুহাররামুল হারাম কুফায় পৌঁছে ছিলেন। এর আগেই শোহাদায়ে কারবালার মস্তক মোবারকগুলো সেখানে পৌঁছানো হয়েছিল। ইমামে আলী মকাম ইমাম হোসাইন (আঃ)
এর শির মোবারক যুগের কলঙ্ক, নরপিশাচ ইয়াজিদী খাওলী বিন ইয়াজিদের কাছে ছিল। ইমাম হোসাইন
(আঃ) এর মস্তক মোবারক নিয়ে সে হতভাগা রাতের বেলায় কুফায় পৌঁছেছিল। কিন্তু রাজ প্রাসাদের দরজা বন্ধ থাকায় সে মস্তক মোবারক নিয়ে তার বাড়ীতে চলে এলো।
সে হতভাগা নূরানী মস্তককে বেয়াদবীর সাথে মাটিতে রেখে একটি বড় পাত্র দ্বারা ঢেকে রাখল এবং তার স্ত্রী নওয়ারকে গিয়ে বলল: আমি তোমার জন্য আজীবনের ধনদৌলত নিয়ে এসেছি। তুমি গিয়ে দেখো, হোসাইন বিন আলীর মস্তক তোমার ঘরে পড়ে আছে। সে ক্রুদ্ধ হয়ে বলে উঠল: “হে পাপীষ্ঠ! তোর উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক এবং তুই চিরতরে ধ্বংস হয়ে যা।
নওয়ারের বর্ণনা: “খোদার কসম! আমি দেখতে পেলাম, আসমান থেকে সে বরতন পর্যন্ত একটি নূরের স্তম্ভ ঝলমল করছিল এবং সে বরতনের চারদিকে সাদা সাদা পাখি উড়ছিল। যখন সকাল হলো খাওলী বিন ইয়াজিদ সে নূরানী মস্তক ইবনে যিয়াদের কাছে নিয়ে গেলো।
(আল কামিল ফিত তারিখ, ৩য় খন্ড, ৪৩৪ পৃষ্ঠা)
ফয়যানে মাদিনা থেকে সংগৃহীত